রিপোর্ট: হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) করোনাভাইরাসের মতো মরণঘাতী নয়। রাষ্ট্রের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতার মাধ্যমে এ রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) এইচএমপিভি নিয়ে আয়োজিত বিশেষ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শাহিনুল আলম এসব কথা বলেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লক অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সেমিনারে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এখানে এর প্রকোপ দেখা দিলে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তুত। বিএসএমএমইউর ভাইরোলজি বিভাগ, মেডিসিন বিভাগ রয়েছে। এই ভাইরাসে শিশু, বৃদ্ধ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম—তারা বেশি আক্রান্ত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব রোগ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য আমরা প্রস্তুত। আর রাষ্ট্রীয়ভাবে বিমানবন্দরে সতর্কতা আরোপ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, এই ভাইরাস নিয়ে দেশের সবাই ভয় পেয়ে যাচ্ছেন। অনেকে মনে করছেন, আবারও কোভিড চলে এসেছে কিনা!
এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমের সঙ্গে চিকিৎসকদের সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শাহিনুল আলম। বলেন, ‘গণমাধ্যমের সঙ্গে আমাদের সংযোগ না হলে প্রতিরোধ ও সচেতনা সৃষ্টিতে কাজে ফল পাবো না। সমাজে যা বিদ্যমান রয়েছে, তা হলো—একটি অংশ ভাইরাসটি নিয়ে অবহেলা করছে, আরেকটা অংশ ভয় পেয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞান, বিশ্ববিদ্যালয় ও গণমাধ্যমের সমন্বয় করার জন্যই আজকের এই সেমিনার।
দেশে এইচএমপিভির ইতিহাস জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ভাইরাসটি আগে থেকেই আমাদের এখানে ছিল, এখনো আছে। কিছুটা হয় তো বেড়েছে। তবে এর ভয়াবহতা ও মৃত্যুহার করোনাভাইরাসের চেয়ে কম। এ রোগের আক্রান্তদের অর্থনীতি ও কর্মক্ষমতা কিছু সময়ের কমে। সেটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শাহিনুল আলম। বলেন, ‘এ ব্যাপারে সতর্কতার বিষয় রয়েছে। এই সতর্কতা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও প্রয়োজন। ব্যক্তিগত পর্যায়ের আমাদের হাত ধোয়ার অভ্যাস আবারও চালু করা দরকার।’
বিএসএমএমইউ ভিসি বলেন, ‘আবহাওয়ার বিশুদ্ধতার দিক থেকে ঢাকা শহর কখনো প্রথম, কখনো দ্বিতীয় ও কখনো তৃতীয় হয়। তালিকায় প্রায়ই দশের মধ্যেই থাকে। এ অবস্থায় সতর্কতার অংশ হিসেবে আমাদের মাস্ক পরা প্রয়োজন। সেটির প্রতি আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিশেষ করে জনসমাগমে মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা।’
সেমিনারে আলোচকরা বলেন, এইচএমপিভিতে আক্রান্ত মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। পুরনো এই ভাইরাসে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বরং দরকার ব্যক্তি পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) ও মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, ট্রেজারার অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম।
এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. সাইফ উল্লাহ মুন্সী এবং ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল মো. আরাফাত।
